নিউয়ার্ক বিমানবন্দরে দুই ঘণ্টা আটকে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করার ঘটনায় ক্ষুব্ধ বলিউড বাদশা শাহরুখ খান। তার সাফ কথা- বেঁচে থাকতে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে আর না। এ নিয়ে ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কূটনৈতিক দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। শাহরুখ খানকে শারীরিক ও মানসিকভাবে এই হেনস্তার ব্যাখ্যা চেয়েছে ভারত। জবাবে ভারতে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত টিমোথি রোহমার বলেছেন, শাহরুখ খানের ঘটনার খোঁজখবর নিচ্ছে দূতাবাস। এ খবর দিয়েছে অনলাইন টাইমস অব ইন্ডিয়া ও বিবিসি। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ভারতীয় অভিবাসীদের আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে শনিবার শাহরুখ খান নিউয়ার্ক থেকে বৃটিশ এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে করে শিকাগো যাচ্ছিলেন। কিন্তু নিউ জার্সির নিউয়ার্ক বিমানবন্দরে তাকে ইমিগ্রেশনে আটকে দেয়া হয়। তার নামের 'খান' শব্দটির জন্য তাকে সন্ত্রাসী হিসেবে সন্দেহ করা হয়। নিজেকে বলিউড অভিনেতা পরিচয় দিয়েও রেহাই পাননি তিনি। তাকে ২ ঘণ্টা আটকে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ সময়ে তাকে মোবাইল ফোনটি ব্যবহার করতেও দেয়া হয়নি। ফলে কারও সহায়তা চাইতে পারেননি শাহরুখ। অবশেষে ভারতে কংগ্রেস দলের এমপি রাজীব শুক্লার কাছে একটি এসএমএস পাঠানোর অনুমতি পান তিনি। দু'ঘণ্টা বিলম্বে তিনি পেঁৗছেন অনুষ্ঠানস্থলে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিপুলসংখ্যক ভারতীয় বংশোদভূত মার্কিনি। স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে তিনি দর্শক-শ্রোতার কাছে অপ্রত্যাশিত বিলম্বের জন্য ক্ষমা চান। তাদের প্রতি বলেন, বিমানবন্দরে নিরাপত্তা কর্মকর্তারা যে আচরণ করেছে তা অপেশাদারি। এ অনুষ্ঠানের আয়োজকদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য তারা আমাকে আমার মোবাইল ফোন থেকে একটি কল করার অনুমতিও দেয়নি। বেঁচে থাকতে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে আর পা দেবো না। তার এ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে দর্শকরা বিস্মিত হয়ে পড়েন। যুক্তরাষ্ট্রে শাহরুখের রয়েছে লাখ লাখ ভক্ত। তারা বারবার তাকে আমন্ত্রণ করে নিয়ে যান সেখানকার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। শাহরুখ যদি তার কথায় অবিচল থাকেন তাহলে বলিউড বাদশাকে হয়তো তারা আর কাছে পাবেন না। যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে আর তার দেখা মিলবে না। শাহরুখ খানের মতো মেগা তারকার এ পরিণতি দেখে ক্ষুব্ধ ভারতও। শনিবারই তথ্যমন্ত্রী অম্বিকা সোনি মার্কিন এ আচরণকে অসৌজন্যমূলক বলে অভিহিত করেছেন। ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ভারত ঘটনার ব্যাখ্যা চেয়েছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তাকে আটকে রাখার কথা অস্বীকার করেছে। তারা বলেছে, শাহরুখ খানকে ৬৬ মিনিট শুধুমাত্র জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ইউএস বু্যরো অব কাস্টমস এন্ড বর্ডার প্রটেকশন-এর মুখপাত্র এলমার ক্যামাচো বলেছেন, বিদেশী ভ্রমণকারীদের যাচাই করতে জিজ্ঞাসাবাদ করা নিরাপত্তা সংস্থার নিয়মিত বিষয়। ওদিকে নয়া দিলি্ল্লতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত টিমোথি রোহমার বলেছেন, দূতাবাস ঘটনাটি তদন্ত করে দেখছে। তিনি আরও বলেন, শাহরুখ খান একজন অভিনেতা, গ্লোবাল আইকন। অতিথি হিসাবে যুক্তরাষ্ট্র তাকে স্বাগত জানায়। অনেক আমেরিকান তার অভিনীত ছবির ভক্ত। আসলে কি ঘটেছিল তা জানার চেষ্টা করছে মার্কিন দূতাবাস।
শাহরুখ খানকে হয়রানির এ ঘটনা ভারতসহ বিশ্বের প্রায় সমস্ত মিডিয়া ফলাও করে প্রচার করে। ফলে শাহরুখ ভক্তদের মধ্যে দেখা দিয়েছে চাপা উত্তেজনা। বলিউডের বাদশা হিসাবে পরিচিত শাহরুখ দীর্ঘদিন ধরে লাখ লাখ ভক্তের হৃদয়ে শক্ত আসন গেঁড়ে আছেন। ইতিমধ্যে মুক্তি পেয়েছে তার ৭০টিরও বেশি ছবি। তার আগে মার্কিন এ রকম হয়রানি থেকে রক্ষা পাননি ভারতের সাবেক প্রেসিডেন্ট এপিজে আবদুল কালামও। এপ্রিল মাসে তাকে দিলি্লর এক বিমানবন্দরে সন্দেহ করে কন্টিনেন্টাল এয়ারলাইন্স। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জুতা-মোজা খুলে দেখাতে হয় সংশ্লি্লষ্ট নিরাপত্তাকমর্ীদের। এ ঘটনায় পার্লামেন্টে তীব্র উত্তেজনা দেখা দেয়। ফলে গত মাসে মার্কিন বিমান সংস্থা কন্টিননেন্টাল এয়ারলাইন্স মাফ চায় এপিজে আবদুল কালামের কাছে। এক বিবৃতিতে তারা বলে- আবদুল কালামের, ভারতের প্রতি কোনরকম আক্রমণাত্মক দৃষ্টিভঙ্গিতে ওই আচরণ করা হয়নি।
No comments:
Post a Comment